ভূমিকম্প নাম শুনলেই গা শিউরে ওঠে। সুনামিসহ বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের উৎস এই ভূমিকম্প। বর্তমান বিশ্বে ভূমিকম্পের ঘটনা বেড়েই চলেছে। ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী, ভূমিকম্প মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক সতর্কবার্তা। হাদিসে এসেছে, অশ্লীলতা, মাদকদ্রব্য গ্রহণ ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপকতাই এর মূল কারণ। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘এ উম্মত ভূমিকম্প, বিকৃতি এবং পাথরবর্ষণের মুখোমুখি হবে। একজন সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, কখন সেটা হবে হে আল্লাহ রাসুল? তিনি বলেন, যখন গায়িকা এবং বাদ্যযন্ত্রের প্রকাশ ঘটবে এবং মদপানের সয়লাব হবে। (তিরমিজি: ২২১২)
ভূমিকম্পের বিভীষিকা কত মারাত্মক হবে কোরআনের এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা তুলে ধরেন এভাবে— ‘হে মানব সকল, তোমরা ভয় করো তোমাদের রবকে। নিশ্চয়ই কেয়ামত দিবসের ভূকম্পন হবে এক মারাত্মক ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে, স্তন্যপায়ী মা তার দুগ্ধপোষ্য সন্তানের কথা ভুলে যাবে আর সব গর্ভবতীর গর্ভপাত হয়ে যাবে। দৃশ্যত মানুষকে মাতালের মতো দেখাবে, আসলে তারা নেশাগ্রস্ত নয়। বস্তুত আল্লাহর শাস্তি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ।’ (সুরা হজ: ১-২)
ভূমিকম্পের আজাবে ধ্বংস হয়েছে সালেহ ও শোয়াইব (আ.)-এর সম্প্রদায়। তারা তাদের নবীদের অবাধ্য ছিল। ভূমিকম্পের আজাব দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছিল তাদের। তাছাড়া এটি কেয়ামতেরও একটি অন্যতম আলামত। কেয়ামত যতই নিকটবর্তী হবে ভূমিকম্পের পরিমাণও ততই বাড়তে থাকবে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত হবে না, যে পর্যন্ত না ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, অধিক পরিমাণে ভূমিকম্প হবে, সময় সংকুচিত হয়ে আসবে, ফেতনা প্রকাশ পাবে, খুন-খারাবি বৃদ্ধি পাবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ এত বৃদ্ধি পাবে যে তা উপচে পড়বে। (বুখারি: ১০৩৬)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ইবনু হাওয়ালা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) আমার মাথা বা মাথার তালুতে হাত রেখে বলেন, হে ইবনে হাওয়ালা, যখন তুমি দেখবে যে বায়তুল মাকদিসে (সিরিয়ার) ভূমিতে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তখন মনে করবে অধিক ভূমিকম্প, বিপদ-আপদ, মহা দুর্ঘটনা ও পেরেশানি সন্নিকটে। কেয়ামত তখন মানুষের এতই নিকটবর্তী হবে, যেমন আমার এ হাত তোমার মাথার যত কাছে আছে। (আবু দাউদ: ২৫৩৫)
মানুষ যখন আল্লাহর আদেশ নিষেধ ভুলে গুনাহে বিভোর থাকবে তখন ভূমিকম্পের মাধ্যমে ভূমি তলিয়ে দেওয়া হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে হাদিসে। নবীজি (স.) বলেছেন, ‘যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে, কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে কিন্তু তার খেয়ানত করা হবে, জাকাতকে দেখা হবে জরিমানা হিসেবে, ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে, পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে কিন্তু মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে, বন্ধুকে কাছে টেনে নিয়ে পিতাকে দূরে সরিয়ে দেবে, মসজিদে উচ্চৈঃস্বরে শোরগোল হবে, জাতির সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিটি সমাজের শাসকরূপে আবির্ভূত হবে, সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি হবে নেতা, একজন মানুষ যে খারাপ কাজ করে খ্যাতি অর্জন করবে, তাকে তার খারাপ কাজের ভয়ে সম্মান প্রদর্শন করা হবে, বাদ্যযন্ত্র এবং নারী শিল্পীর ব্যাপক প্রচলন হবে, মদ পান করা হবে, লোকজন তাদের পূর্ববর্তী মানুষগুলোকে অভিশাপ দেবে, এমন সময় তীব্র বাতাস প্রবাহিত হবে এবং এমন একটি ভূমিকম্প হবে যা সেই ভূমিকে তলিয়ে দেবে। (তিরমিজি: ১৪৪৭)
কেয়ামতের আগে আজাব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার ঘোষণা—‘জনপদের অধিবাসীরা কি এতই নির্ভয় হয়ে গেছে যে আমার আজাব (নিঝুম) রাতে তাদের কাছে আসবে না, যখন তারা (গভীর) ঘুমে (বিভোর হয়ে) থাকবে!’ (সুরা আরাফ: ৯৭)
‘পৃথিবী ভীষণভাবে উঠিবে কাঁপিয়া/ভেতরের বোঝা দেবে বাহির করিয়া/ মানুষ বলিবে কী হইলো ইহার/বলিবে আপন-খবর পৃথিবী তাহার’ (কাব্যানুবাদ, সুরা জিলজাল: ১-৪)। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মাদকদ্রব্যগ্রহণ, বেহায়াপনা ও বাদ্যযন্ত্রের ফেতনা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। ভূমিকম্পের মতো ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।